সিজারে পেটে গজ রেখে সেলাই গৃহবধুর মৃত্যু : ৩ চিকিৎসক, হাসপাতালের চেয়াম্যানেরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আকতার হোসেন (রবিন):

কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার আল ইসলাম হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুলবশত পেটে গজ রেখে সেলাইয়ের ৫ মাস পর গৃহবধু শারমিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ চিকিৎসস ও হসপিটালের চেয়ারম্যাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বুধবার দিবাগত রাতে ওই গৃহবধু’র বাবা দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোবারক হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অপারেশনকারী সার্জন ও দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোজিনা আক্তার, ওই প্রাইভেট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা, এনেসথেসিয়া চিকিৎসক ডা. মেহেদুল হাসান পারভেজ, হাসপাতালের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ ও গ্রাম্য চিকিৎসক সফিকুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান। এর আগে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় গৃহবধু শারমিন আক্তারের মৃত্যু হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ৫ নভেম্বর মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের রাসেল মিয়ার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে দেবিদ্বার আল ইসলাম হসপিটালে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই হাসপাতালের খন্ডকালীন চিকিৎসক ডা. রোজিনা আক্তার ও তার সহযোগী ডা. শামীমা আক্তার লিন্টাসহ অন্যান্যরা।

সিজারিয়ানে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। গত ৯ নভেম্বর ২০২০ইং তারিখে গৃহবধু শারিমন আক্তারকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়।

বাড়ি ফেরার পর ব্যাথা আরও বেড়ে গেলে গৃহবধুকে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রচুর ওষুধ খেতে দেন। কিন্তু তার জীবন সংকটাপন্ন দেখা দিলে গত ৬ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে তার অপারেশন করে পেট থেকে গজ বের করা হয়।

সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় গত শনিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে তাকে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রথমে আইসিইউতে ও পরে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটের সময় গৃহবধু শারমিন আক্তারের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে প্রসূতির স্বামী রাসেল মিয়া জানান, ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রীকে হারাতে হলো, দুটি শিশু সন্তান তাদের মাকে হারালো।

এ ব্যাপারে আল ইসলাম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, ওই প্রসূতির দুটি অপারেশন হয়েছে। এ বিষয়ে যেহেতু দুটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেহেতু কার অপারেশনের ভুলে এ রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা তদন্তে বের হবে।

মুঠোফোনে অপারেশনকারী সার্জন ডা. রোজিনা আক্তার বলেন, ৫ মাস আগে গৃহবধু শারমিনের সফল অপারেশন করার পর সুস্থ হয়ে সে বাড়িতে যায়। পরে সে তার সমস্যার কথা তাকে কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি।

এছাড়াও ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের দেয়া ছাড়পত্রে গজ বের করার কথা লেখা নেই। লেখা আছে ‘লাম্প এভডুমিন’। মেডিকেল ভাষায় যাকে বলা হয় টিউমার কিংবা পেট ফোলা জাতীয় সমস্যার সন্দেহে অপারেশন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ওই প্রসূতির মৃত্যুর খবর আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি। তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!